Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

বাগাতিপাড়া উপজেলার পটভূমি

অষ্টাদশ শতকের অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত বিদগ্ধ প্রকৃতি প্রেমী কবি জীবনান্দ দাশের কল্পলোকের প্রেয়সী বনলতা সেন, রসনাতৃপ্ত সু-স্বাদু অবাক সন্দেশ, কাঁচাগোল্লা আর দৃষ্টি নন্দন অপূর্ব কারুকার্য্য খচিত উত্তরা গণভবন খ্যাত ঐতিহ্যবাহী নাটোর জেলার ছোট একটি উপজেলা বাগাতিপাড়া। মালঞ্চি রেলওয়ে ষ্টেশনের ২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে বড়াল নদীর পূর্ব তীরে বাগদী পাড়া নামক স্থানে নাটোর সদর থানার দক্ষিণে মাত্র ৫ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে পাঁকা,জামনগর,বাগাতিপাড়া,দয়ারামপুর ও ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়ন নিয়ে ১৯০৬ সালে বাগতিপাড়া পুলিশ ষ্টেশন স্থাপিত হয়। প্রথমে থানার নাম ছিল বাগদী পাড়া। কথিত আছে তৎকালিন রেনউইক কম্পানী এবং নীলকর সাহেবগণ স্থানীয় বাগদীদের দ্বারা প্রজাদের উপর অত্যাচার ও নীপিড়ন চালাত। যার ফলে তাদের প্রতি ঘৃণার নিদর্শন স্বরূপ বাগদীপাড়া পুলিশ ষ্টেশনের নাম করন করা হয় বাগাতিপাড়া। এর পর ১৯৬২ সালে মালঞ্চি রেলওয়ে ষ্টেশনের ০.৭ কিঃ মিঃ দক্ষিণে রেল লাইনের পশ্চিম পার্শ্বে বড়াল নদীর উত্তর তীরে ১৬ একর ৭৭ শতাংশ অপেক্ষাকৃত নিঁচু জমিতে থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র (টিটিডিসি) স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ১৫ এপ্রিল প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ধারাবাহিকতায় মান উন্নীত থানা বাগাতিপাড়া উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

            উপজেলা সদর থেকে ৬ কিঃ মিঃ পশ্চিমে নুরপুর মালঞ্চি গ্রামে হযরত শাহ মোকাররম দানেশমান্দ(রঃ) সহ তার কয়েকজন আওলিয়ার মাজার শরিফ অবস্থিত। উক্ত মাজার জিয়ারতের জন্য প্রতি বছর সেখানে হাজার হাজার ধর্মভীরু মানুষের সমাগম ঘটে। হযরত শাহ মোকাররম দানেশমান্দ(রঃ) এর মাজার পাশেই একটি অপেক্ষাকৃত ছোট কবর আছে যা তার সঙ্গী বাঘের কবর বলে জনশ্রুতি আছে। সম্ভবত এ জন্যই স্থানটির বর্তমান নাম বড়বাঘা বলে পরিচিত। ১৮৯৪ সালে দিঘাপতিয়া রাজ বংশের রাজা প্রমোথনাথ রায়ের একমাত্র কন্যা রাজকুমারী ইন্দ্র প্রভার বিয়ে হয় এই গ্রামেরই জমিদার মহিন্দ্র কুমার শাহ চৌধুরীর সঙ্গে। তাদের প্রাসাদের ধবংসাবশেষ এখনও পুরাতন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। ঊনুবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বৃটিশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রেনউইক কোম্পানী বর্তমান উপজেলা পরিষদের ১.৫ কিঃ মিঃ পশ্চিমে নওশেরা গ্রামে তাদের কারখানার একটি শাখা স্থাপন করেন। এখানে দেশীয় আখমাড়াই কল তৈরী করা হত। যা জনসাধারণের মধ্যে ভাড়ায় বিতরণ করে কোম্পানী বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করত। ১৯৬২ সালে কলকারখানা যন্ত্রপাতি কোম্পানী তাদের কুষ্টিয়া শাখায় স্থানান্তর করে নিয়ে যায়। বর্তমানে এইখানে একটি অট্রালিকা ও কারখানার ছাওনি বিদ্যমান আছে।

            এককালে বাংলার জনসাধারণের মধ্যে নীল চাষের জন্য নীলকর সাহেবদের অত্যাচার নীপিড়ন থেকে এ এলাকাও বাদ যায়নি। উপজেলা পরিষদ থেকে ২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে বড়াল নদীর অপর পার্শ্বে বর্তমান রায় পরিবারের আম্রকাননের মনোরম পরিবেশে নীল কুঠির অবস্থান ছিল।

            ১৮৯৪ সালে দিঘাপতিয়া রাজস্টেটের রাজা প্রমথ নাথ রায় তার কনিষ্ঠ তিন পুত্রের জন্য অত্র উপজেলার নন্দীকহজা মৌজায় একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। নন্দীকহজা মৌজার এ রাজস্টেট গড়ে ওঠে দিঘাপতিয়া রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারামের নামে। তাঁর নাম অনুসারেই ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় দয়ারামপুর । প্রাসাদ সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে কাদিরাবাদ সেনানিবাস নির্মাণ করা হয়েছে এবং দয়ারামপুর ইউনিয়ন ভেঙ্গে ফাগুয়াড়দিয়াড় নামে আরো একটি নতুন ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

            উপজেলা সদরের প্রায় ১৬ কিঃ মিঃ পশ্চিমে জামনগর ইউনিয়নের শাখারী পাড়া গ্রামটি সুপ্রাচীন কাল হতে শঙ্খ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। সুদুর শ্রীলংকা থেকে শংঙ্খ আমদানী করা হয় এবং প্রক্রিয়াজাত করে এখানে বিভিন্ন  রকমের শাঁখার অলংকার তৈরী করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে প্রায় দু‌শো পরিবার এই শিল্পের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। ১৯৪৬ সালে অত্র উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সর্বপ্রথম একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয় এবং এর প্রায দু‌বছর পর ১৯৪৮ সালের ৮ই আগস্ট জেলা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে লক্ষণহাটি দাতব্য চিকিৎসালয় নামে বিহারকোর মোড়ে আরো একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয় যা পরবর্তীকালে সত্তোর দশকের শেষের দিকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে ৩১ শয্যার হাসপাতালে রুপান্তরিত হয়ে এলাকার বিপুল জন গোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করছে। বর্তমানে এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে পরিচিত।

 

গ্রন্থনা : মো: আরশাদ আলী, পরিসংখ্যানবিদ,

          বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাগাতিপাড়া, নাটার।

 

তথ্যসূত্র : ১) রাজশাহী শতবর্ষের স্মারক গ্রন্থ।

             ২) রাজশাহী পুলিশ সুপারের র্কর্যালয়ে রক্ষিত নথি এবং

            ৩) সমর পাল রচিত নাটোরের ইতিহাস।